
‘নিষ্পলক দৃ’ষ্টিতে তাকিয়ে আছি, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবো কি?’। গত ১৩ জানুয়ারি নিজের একটি ছবির পোস্টে এই ক্যাপশন লেখেন ইউনুস আলী। আর তার বন্ধু সনাতন কুমা’র দাস গত ১৯ জানুয়ারি দুটি ছবির পোস্টে ক্যাপশন লিখেছেন- ‘না জানি কে কবে কোথায় হারিয়ে যায়, এজন্য একটু স্মৃ'’তি ধরে রাখলাম।’ এমএম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের পরীক্ষার্থী ছিলেন ইউনুস ও সনাতন দাস।বুধবার পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঝিনাইদহের বারোবাজার এলাকায় সড়ক দু’র্ঘটনায় নি’'হত হয়েছেন তারা। এই মৃ'’ত্যুর মিছিলে যুক্ত হয়েছেন তাদের আরও চার সহপাঠী।








ওই সড়ক দু’র্ঘটনায় নি’'হত ১২ জনের ছয়জনই যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের সমাজবিজ্ঞান, রা’ষ্ট্রবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষার্থী।একটি দু’র্ঘটনা নি’'হতদের পরিবারে বয়ে এনেছে সারা জীবনের কান্না। এদের মধ্যে ছয় শিক্ষার্থীর মৃ'’ত্যুতে অ’পূরণীয় ক্ষ’তি হয়েছে পরিবারের। একেকজনের স্বপ্ন ছিল পড়াশুনা শেষ করে পরিবারের হাল ধ’রা। কেউ কেউ পরিবারের হাল ধরেও ছিল। কিন্তু নানা রঙের স্বপ্নে রঙিন দিনগু'’লো নিমেষেই নিঃশেষ হয়ে গেল। প্রিয়জনের চিরবিদায়ে শোকে বিহবল পরিবার, স্বজন বন্ধুরা। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারো। একই কলেজের ছয় শিক্ষার্থীর অকাল মৃ'’ত্যুতে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরাও শোকা’'হত।
নি’'হত ছয় শিক্ষার্থী হলেন- মাস্টার্সের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ঝিনাইদহ সদর উপজে’লার নাথকুণ্ডু গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে ইউনুস আলী, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজে’লার বড় ভাটপাড়া গ্রামের রণজিত কুমা’র দাসের ছেলে সনাতন কুমা’র দাস, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজে’লার হরিণদিয়া গ্রামের মোহা'ম্ম’দ আলীর ছেলে হারুন অর র’শিদ। মাস্টার্সের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী চুয়াডা’'ঙ্গা সদর উপজে’লার দিংদহ গ্রামের আবদুর র’শিদের মেয়ে শারমিন আক্তার রেশমা ও চুয়াডা’'ঙ্গার আলমডা’'ঙ্গা উপজে’লার নাগদহ গ্রামের জান্নাতুল বিশ্বা’সের ছেলে অলিউল রহমান শুভ এবং মাস্টার্স রা’ষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজে’লার সুন্দরপুর গ্রামের মুস্তাফিজুর রহমান কল্লোল।সরকারি এমএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল মজিদ বলেন, বুধবার মা’র্স্টাসের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে ঝিনাইদহ ও চুয়াডা’'ঙ্গা এলাকার শিক্ষার্থীরা বাসে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে বারোবাজারে দু’র্ঘটনার শি’কার হয়। এ দু’র্ঘটনায় আমা’দের কলেজের ছয়জন শিক্ষার্থী নি’'হতের খবর পেয়েছি। আ’'হত হয়েছেন আরও ১০-১২ জন। আ’'হতদের মধ্যে চারজন চিকিৎসাধীন আছেন।








তিনি বলেন, দু’র্ঘটনার খবর পেয়েই বুধবার নি’'হতদের বাড়িতে গিয়েছি। পারিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়েছি। তাদের সৎকারে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। একই স’'ঙ্গে কলেজের উদ্যোগে আ’'হত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলেজ ক’র্তৃপক্ষ সবসময় তাদের পাশে আছে। নি’'হতদের স্মর'’ণে শনিবার কলেজ মসজিদে দোয়া মাহফিল হবে। পরবর্তীতে স্মর'’ণসভার আয়োজন করা হবে।অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল মজিদ বলেন, একটি দু’র্ঘটনায় এত সংখ্যক শিক্ষার্থী মৃ'’ত্যুতে আমর'’া শোকা’'হত। নি’'হতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এই শোকের সান্ত্বনা জানানোর ভাষা নেই।
এদিকে দু’র্ঘটনায় নি’'হত প্রত্যেকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শিক্ষার্থীদের এমন মর'’্মান্তিক মৃ'’ত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। কালীগঞ্জ উপজে’লার বড় ভাটপাড়া গ্রামের সনাতন কুমা’র দাসের মৃ'’ত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর বাবা-মা। রাজমিস্ত্রির কাজ করে ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছিলেন বাবা রণজিৎ কুমা’র দাস।বাবা রণজিৎ দাস বলেন, খুব ক’ষ্ট করে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি। খেয়ে না খেয়ে তার খরচ দিচ্ছিলাম। একদিন সে চাকরি করে অভাব ঘুচাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ফিঁকে হয়ে গেছে। তার একটি পাঁচ মাসের সন্তান রয়েছে। কীভাবে তাকে মানুষ করব সেটা ভেবে পাচ্ছি না।








সন্তানকে হারিয়ে কথা বলতে পারছেন মা দুর্গা রানী। মাঝে মাঝে বলে উঠছেন, আমা’দের আগে আমা’র মনি (সনাতন) চলে গেল। বিরাট ক্ষ’তি হয়ে গেল আমা’দের। দুই-একটি কথা বলেই আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।কালীগঞ্জ উপজে’লার সুন্দরপুর গ্রামের নি’'হত মুস্তাফিজুর রহমান কল্লোলের ভাই নাসির উদ্দিন বলেন, আমা’দের বড় আশা ছিল ভাইকে নিয়ে। বড় আশা করে তাকে লেখাপড়া শেখানো হয়েছে। চালকের অ’সচেতনতায় বাস দু’র্ঘটনায় প্রাণ গেল তার। আমা’র পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে গেল। সে সাতক্ষীরাতে মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদ’'প্ত রে চাকরি করতেন।
কল্লোলের দুলাভাই আলমগীর কবির বলেন, পরিবার ও সরকার এত টাকা খরচ করে তাদের লেখাপড়া শিখিয়েছে। গাছটি লালন পালন করে মাত্র ফুল ফুটেছে। সে থেকে ফল পাওয়ার আশা ছিল প্রত্যেকের। সেই ফুল অকালে ঝরে গেল। এ দায়ভার কার।আরেক শিক্ষার্থী হারুন অর র’শিদের বন্ধু তুষার ইমর'’ান বলেন, দু’র্ঘটনায় আ’'হত হওয়ার পর যশোর জেনারেল হাসপাতালে হারুন অর র’শিদকে রেফার্ড করা হয়। অবস্থা গু'’রুত্বর দেখে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। এরপর হাসপাতালে বৃ’'দ্ধ বাবা-মা ও বোন এসে পৌঁছালে কিছুক্ষণ পরেই বাবা-মায়ের কোলে মৃ'’ত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।








জানা যায়, বুধবার ‘বিকালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজে’লার বারোবাজার এলাকায় যশোর থেকে মাগু'’রাগামী জিকে পরিবহনের একটি বাস বিপরীত থেকে আসা একটি ট্রাকের স’'ঙ্গে সং’ঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ওপর আড়াআড়ি হয়ে উল্টে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন ও পরে ৩ জন মা’রা যান। আ’'হত হন অন্তত ১৫ জন।কালীগঞ্জ থা’নার ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, নি’'হতদের ১২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। পরিবারের কাছে তাদের লা’শ হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply